ইনফিনিটি,
ইনফিনিটি এমন একটা শব্দ যা হয়তো মানবজাতির জন্য সবসময় রহস্যই থেকে যাবে। আবার অনেক জটিল জটিল প্রশ্নের জবাব এই একটা শব্দেই দেয়া যায়। ইনফিনিটি।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড শুরু কখন হয়ছে? ইনফাইনাইট সময় আগে।
এর শেষ হবে কখন? ইনফাইনাইট সময় পরে।
এটার আকার কত বড়? ইনফিনিটি।
দেখলেন? কত সোজা। যা জানিনা সবই ইনিফিনিটি।
কিন্তু এই ইনিফিনিটিকেও কি একটা ফাইনাইট কিছুতে বেধে ফেলা যায়? যাবে। একটা চারকোনা কেকের কথা চিন্তা করা যাক। সেটাকে আমরা অর্ধেক করে কাটলাম। একটা অর্ধেককে আরেকটা অর্ধেকের উপরে রাখলাম। এবার উপরের অর্ধেককে আবার অর্ধেক করলাম। দিয়ে একটার উপরে আরেকটা রাখলাম। এভাবে প্রত্যেকবার অর্ধেক করার পর সেটার আবার অর্ধেক করে একটার উপর আরেকটা রাখতে থাকি। মানুষের লিমিটেশন আছে। হয়তো কয়েক ধাপ যাওয়ার পর আর কাটা সম্ভব হবেনা। কিন্তু গাণিতিক ভাবে করতে দোষ কি? এভাবে একটার উপর একটা করে সাজাতে থাকলে শেষ পাওয়া সম্ভব না। তাহলে আমরা কতদূর পর্যন্ত কাটতে পারবো? ইনফিনিটি। এখানে লক্ষ করার মত ব্যাপারটা হচ্ছে যে পুরো কেকের সাইজটা তো চেঞ্জ হবেনা। যেটা শুরুতে এক খন্ড কেকের আয়তন ছিলো, অর্ধেক করতে করতে বড় টাওয়ার বানায়ে ফেললেও আয়তন একই থাকবে। যদিও টাওয়ারের সারফেস এরিয়া কিন্তু ইনফিনিটি। এই যে, ইনিফাইনাইট সারফেসকে ফাইনাইট একটা আয়তন দিয়ে বেধে ফেলা সম্ভব হলো।
এখানে যেটা করা হলো সেটা খুব বাচ্চামী উদাহরন। যেন বুঝা যায়। বড় বড় সায়েন্টিস্টরা যেটা করেছেন সেটা হলো ইনফাইনাইট একটা কাজকে ফাইনাইট পরিমান সময়ে বেধে ফেলা। অবশ্যই থিউরি দিয়ে। বাস্তবে তো সম্ভবনা। তাহলে আলোচনা করা যাক ব্যাপারটা।
ধরা যাক একঘন্টা সময় বেধে দেয়া হলো কেক কাটার কাজটা শেষ করার জন্য। রুল হচ্ছে যখন প্রথমবার অর্ধেক করবো, তখন মোট সময়ের অর্ধেক সময় পাবো। মানে ৩০ মিনিট। তার পরের অর্ধকের জন্য পাবো বাকি সময়ের অর্ধেক। মানে ১৫ মিনিট। তার পরের অর্ধেকের জন্য আরো অর্ধেক। মানে ৭.৫ মিনিট। এভাবে অর্ধেক করতে থাকবো অর্ধেক সময় নিয়ে। তাহলে কি দাড়াচ্ছে? কাজটা কত স্টেপে শেষ হচ্ছে তা আমরা জানিনা। কিন্তু কতক্ষনে শেষ হবে তা জানি। সেটা হচ্ছে একঘন্টা। ইন্টারেস্টিং না? এইযে ফাইনাইট সময়ের মধ্যে একটা ইনফাইনাইট পরিমান কাজ করে ফেললাম, এটাকেই সুপারটাস্ক বলা হচ্ছে।
সুপারটাস্কের সর্বপ্রথম ধারনা আসে জেনো(Zeno) নামক একজন বিজ্ঞানীর কাছ থেকে। সুপারটাস্ক বুঝানোর জন্য উনি একটা গল্প ফেঁদেছিলেন। আকিলিসকে মনেহয় আমরা সবাই চিনি। হোমারের বর্ননায় ট্রয়ের যুদ্ধের সেই বিখ্যাত নায়ক। তাকে একটা কাজ দেয়া হলো। একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব পর্যন্ত তাকে দৌড়ে যেতে হবে। কিন্তু শর্ত আছে। সেই দুরত্বটা অর্ধেক অর্ধেক করে পার করতে হবে। প্রথমে পুরো দুরত্বের অর্ধেক। তারপর বাকি দুরত্বের অর্ধেক। তারপর বাকি দুরত্বের অর্ধেক। এভাবে অর্ধেক অর্ধেক করে পার করতে থাকতে হবে।
গাণিতিক ভাবে কিন্তু সব দুরত্বকেই দুই দিইয়ে ভাগ করা যায়। তাই শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে ব্যাপারটা ইনফিনিটিতে ঠেকছে। কিন্তু দুরত্বটা কিন্তু একটা ফাইনাইট সংখ্যা। এটা অবশ্য মডিফাইড গল্প। জেনোর আসল গল্পে একটু প্যাঁচ আছে। আসল গল্পটা এখানে পড়ে দেখতে পারেন। তারপরেও, মুল কথা কিন্তু একটাই। একটা ইনফাইনাইট কাজকে একটা ফাইনাইট কিছুতে বেঁধে ফেলা। হোক সেটা সময় বা দূরত্ব।
আসলে সমস্যাওটা হচ্ছে মানুষের লিমিটেশন। মানুষ তার লিমিটেশনের কারনে জগতের অনেক রহস্যই সমাধান করতে পারেনা। যেমন দূরত্বের কথাই যদি ধরি, মানুষের ক্যালকুলেশনের জন্য ব্যাবহৃত সবচেয়ে ছোট যেই দূরত্বটা নেয়া হয়, সেটাকে বলে প্ল্যাঙ্ক লেন্থ। সেটা 1.6 x 10-35 মিটার। আর সময়ের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতম হচ্ছে এই আলোর গতিতে এই প্ল্যাঙ্ক লেন্থ পার হতে যত সময় লাগে। তা হলো 5.39 × 10−44 সেকেন্ড। কিন্তু এরচেয়ে ছোট দূরত্ব বা সময় কি নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু সেগুলা দিয়ে একটা থিউরি টেস্ট করার মত ক্যাপাবিলিটি এখনও মানুষের নেই।
সুপারটাস্কের আরো অনেক মাত্রা আছে। আরো অনেক অনেক উদাহরন আছে। এই আর্টিকেল পড়ে সুপারটাস্কের ব্যাপ্তিটা উপলব্ধি করতে না পারলে মাথা ঘুরানোর মত কিছু রিসোর্স দিতে চেষ্টা করছি। আর একটা ইউটিউব ভিডিও, যেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আর্টিকেলটা লেখা। যেখানে আরো সহজ ভাবে সব কিছু ব্যাখ্যা করা আছে।
আসতে আসতে হয়তো মানুষের সক্ষমতা বাড়বে। হয়তো কোনোদিন আমরা ইনফিনিটিও কাউন্ট করে ফেলতে পারবো। ইন্টারস্টেলারের সেই ফিফথ ডাইমেনশন মনে আছে?
Some resources for further studies:
- https://plato.stanford.edu/entries/spacetime-supertasks/
- http://www.pitt.edu/~jdnorton/papers/qmsupertask.pdf
- http://personal.lse.ac.uk/robert49/ebooks/PhilSciAdventures/lecture25.html
- http://www.vordenker.de/gunther_web/achill1.htm
- http://freakymath.blogspot.com/2011/05/supertask.html
Comments
Post a Comment